Friday, January 17, 2025
No menu items!
Google search engine
Homeঅন্য খেলাএশিয়ান গেমস ২০২৩-এ ক্যানোয়িতে ব্রোঞ্জ জয়ী সুনীল-অর্জুনের লড়াইয়ের কাহিনী

এশিয়ান গেমস ২০২৩-এ ক্যানোয়িতে ব্রোঞ্জ জয়ী সুনীল-অর্জুনের লড়াইয়ের কাহিনী

অলস্পোর্ট ডেস্ক: দীর্ঘ ২৭ বছর পর ক্যানোয়িতে নজির গড়েছেন ভারতের দুই ছেলে, সুনীল এবং অর্জুন। সালাম সুনীল সিং পেশায় এক মৎস্যজীবীর সন্তান এবং অর্জুন সিংয়ের বাবা নেই, মা একটি কারখানায় কর্মরত। তাঁরা একে অপরের থেকে ২০০০ কিলোমিটার দূরে বড় হয়েছে। কিন্তু তাদের এক সুতোতে বেধে রেখেছে এই ক্যানোয়ি। অন্তহীন আবেগ জড়িয়ে আছে তাদের এই খেলার সঙ্গে। মণিপুরের মইরাং থেকে ২৪ বছর বয়সী সুনীল এবং রুরকিতে বেড়ে ওঠা ১৬ বছর বয়সী অর্জুন সেই আবেগকে আরও বেশি জোরালো করে দেন এদিন। এশিয়ান গেমস ২০২৩-এ পুরুষদের ডাবলস ১০০০ মিটার ক্যানোয়ি ইভেন্টে ভারতকে ব্রোঞ্জ পদক এনে দিয়েছে তাঁরা। এই জুটি ৩:৫৩.৩২৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে ক্যানোয়িতে তৃতীয় হয়েছে।

২৭ বছর পর আবার ক্যানোয়িতে দেশে ব্রোঞ্জ এল দ্বিতীয়বারের মতোন। ১৯৯৪-এর হিরোশিমা সংস্করণে, সিজি সদানন্দন এবং জনি রোমেলের মাধ্যমে ভারত এই একই ইভেন্টে প্রথম ব্রোঞ্জ জিতেছিল।

সুনীল এবং অর্জুনের জন্য, এই পদকটি তাদের জীবনে কঠিন প্রতিকূলতার মধ্যেও ভেঙে না পড়ার ও কঠোর পরিশ্রমের ফলাফল।

‘‘আমার বাবা (ইবোয়াইমা সিং) একজন জেলে এবং প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা তিনি তার নৌকা নিয়ে লোকটাক হ্রদে মাছ ধরতে বেরিয়ে পড়েন এবং এটাই আমাদের পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। আমার মা (বিনীতা দেবী) একজন গৃহিণী,’’ সুনীল হ্যাংঝৌতে ব্রোঞ্জ জেতার পরে পিটিআইকে বলেন।

‘‘যখন আমি শুরু করি তখন আমার খুব কঠিন পরিস্থিতি ছিল, কারণ নৌকা এবং অন্যান্য সরঞ্জামের অনেক দাম। একটি প্যাডেলের দাম সর্বনিম্ন ৪০,০০০টাকা এবং একটি নৌকার দাম চার-পাঁচ লাখ টাকা মতোন। প্রাথমিকভাবে, আমার পরিবার এবং আত্মীয়রা আমাকে অনেক সাহায্য করেছিল কিন্তু আমি ২০১৭-তে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর, নিজেকে সবদিক থেকে সামলাতে সক্ষম হয়েছিলাম,’’ সুনীল বলেন।

জলের প্রতি সুনীলের আবেগ অনেকটাই গভীর কারণ তিনি উত্তর-পূর্ব ভারতের বৃহত্তম লোকটাক হ্রদের নিকট জন্মগ্রহণ করেছেন ও বেড়ে উঠেছেন সেখানে। বিখ্যাত কেইবুল লামজাও জাতীয় উদ্যানও এখানে রয়েছে।

লেকের কাছে ওয়াটার স্পোর্টস ট্রেনিং কমপ্লেক্সে সুনীলের প্রথম ক্যানোয়িং-এ হাতেখড়ি। তিনি তাঁর একজন কাকিমার পরামর্শে ২০১৩-তে হায়দ্রাবাদে চলে আসেন, যিনি একজন ক্যানোয়ি কোচও।

২০১৫-তে সুনীল জাতীয় শিবিরের জন্য নির্বাচিত হন এবং পরের বছর তিনি জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হন। তারপর তিনি রুরকি আর্মি সেন্টারে প্রশিক্ষণ নেন। তবে পরে ভোপাল চলে আসেন এবং এসএআই সেন্টারে পুরুষদের প্রশিক্ষক পীযূষ বারোইয়ের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন।

বোরাইয়ের পরামর্শে সম্প্রতি ভোপালে যাওয়ার আগে অর্জুনও রুরকিতে ছিলেন। আগস্টে জার্মানিতে ক্যানোয়ি স্প্রিন্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের কয়েক মাস আগে সুনীল-অর্জুন প্রথমবারের মতোন জুটি বেঁধেছিলেন, যেখানে তারা ফাইনালে পৌঁছেছিল এবং নবম স্থানে শেষ করেছিল।

অর্জুনের পরিবার উত্তর প্রদেশের ভাগপৎ থেকে, কিন্তু পরে তারা রুরকিতে চলে আসেন। অর্জুনও এসএআই, ভোপালে প্রশিক্ষণ নেয় কিন্তু এখানে আসার আগেও অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে তাকে এবং তাঁর পরিবারকে যেতে হয়েছে যেগুলো তিনি কোনওদিনও ভুলতে পারবেন না।

‘‘আমার বাবা এখন আর বেঁচে নেই এবং আমার মা রুরকিতে একটি ওষুধ তৈরির কারখানায় কাজ করেন, মাসে ৮০০০-১০,০০০ টাকা আয় আমাদের। আমরা একটি ভাড়া বাড়িতে থাকি। এত অল্প আয়ে এটা করা খুবই কঠিন ছিল। আমার মা অনেক কষ্ট পেয়েছেন’’ অর্জুন পিটিআইকে বলেন।

দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্র অর্জুন বলেন, ‘‘আমি ভোপাল এসএআই সেন্টারে থাকার পর থেকে এখন একটু ভাল অবস্থা আছে। এখানে আমার খুব ভাল যত্ন নেওয়া হয়।’’

‘‘আমি ছোটবেলার থেকেই এই খেলার প্রতি মুগ্ধ। আমার কাকা আমাকে অনেক উৎসাহিত করেছিলেন। আমি এটা খেলার প্রতি এতটাই অনুরাগী হয়ে গিয়েছিলাম যে আমি প্রায়ই স্বপ্ন দেখতাম  প্রতিযোগিতায় খেলার। এমনকি গতকাল (হ্যাংঝৌতে) আমি আমার স্বপ্নে একটি প্রতিযোগিতায় পদক জিতেছিলাম,’’ অর্জুন বলে।

চেক প্রজাতন্ত্রের মার্টিন ফুকসাকে নিজের আইডল মনে করেন ক্যানো ১০০০ মিটার ইভেন্টে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অর্জুন। কিন্তু অর্জুনের সামনে এখন আরও বড় লক্ষ্য রয়েছে, সেটি হল প্যারিস অলিম্পিক।

“প্যারিস অলিম্পিক আমার লক্ষ্য এবং আমরা সেখানে পৌঁছানোর জন্য আমাদের সেরা দিয়ে চেষ্টা করব,” অর্জুন শেষ করেন।

খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com

অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments