Wednesday, October 8, 2025
No menu items!
Google search engine
Homeফুটবলমোহনবাগান কর্তাদের যৌথ বিবৃতির সাফাইয়ে কি চিঁড়ে ভিজবে, এএফসির বড়সড় শাস্তি এড়ানো...

মোহনবাগান কর্তাদের যৌথ বিবৃতির সাফাইয়ে কি চিঁড়ে ভিজবে, এএফসির বড়সড় শাস্তি এড়ানো যাবে?‌

মুনাল চট্টোপাধ্যায়:‌ গত মরশুমে কোচ, ফুটবলার, সাপোর্ট স্টাফ, কর্মীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ইরানের মাঠে ট্রাক্টর এফসি বিরুদ্ধে এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ টায়ার টু-‌র ম্যাচ খেলতে যায়নি মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। সেই মুহূর্তে ইরান জুড়ে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি যে পর্যায়ে ছিল, মোহনবাগান টিম ম্যানেজমেন্টের, তাতে ওই ম্যাচ না খেলাকে সকলেই সমর্থন জানিয়েছিলেন। এএফসি শাস্তি হিসেবে মোহনবাগানকে টুর্নামেন্ট থেকে বাতিল করা সত্ত্বেও। সকলেই মেনে নিয়েছিলেন, মানুষের জীবন আগে, পরে খেলা।

কিন্তু এবার যখন একই পরিস্থিতি তৈরি হল, মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ইরানের দল সেপাহান এফসির বিরুদ্ধে খেলতে গেল না সেই কোচ, ফুটবলারদের নিরাপত্তার বিষয় সামনে রেখে, তখন সবুজ মেরুন সমর্থকদের একাংশ যে অখুশি হবেন, এটা তো স্বাভাবিক। অনেকেই আবার মোহনবাগানের ঠুঁটো জগন্নাথ কর্তা আর ইনভেস্টার সঞ্জীব গোয়েঙ্কার ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এটা তো স্বাভাবিক।

আর সেটা বুঝেই সঞ্জীব গোয়েঙ্কার হয়ে সাফাই দিতে আসরে নেমেছেন মোহনবাগান সচিব সৃঞ্জয় বসু ও সভাপতি দেবাশিস দত্ত। তাও আবার যৌথ বিবৃতি দিয়ে। সেই বিবৃতি দেওয়া হল কখন, যখন ক্লাবের সদস্য বা সমর্থকরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মোহনবাগানের কথায় কথায় বিভিন্ন টুর্নামেন্টে না খেলার বাহানায়। অথচ যখন বারবার তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, এবার ইরানে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট দল খেলতে যাবে কি?‌ কী অবস্থায় রয়েছে গোটা ব্যাপারটা?‌ তখন সভাপতি ও সচিব শুধু সদুত্তর দিতে পারেননি এব্যাপারে তাই নয়, এটা তাঁদের বিষয় নয়, অন্যদের বলে, একে অপরের দিকে আঙুল দেখিয়ে, বিষয়টা এড়িয়ে গিয়েছিলেন। এখন তাঁরা হঠাৎই আশ্চর্যজনকভাবে সরব। সম্ভবত সঞ্জীব গোয়েঙ্কার অসন্তোষ টের পেয়ে।

ইরানে নিরাপত্তার প্রশ্নে দল না পাঠানোর বিষয়টা তো নতুন নয়। গত মরশুমে এমনটা ঘটার পর টুর্নামেন্ট থেকে বাতিল হওয়ার পর মোহনবাগান কর্তা বা সুপার জায়ান্ট টিম ম্যানেজমেন্ট কি জানতেন না, এবারও আইএসএল শিল্ড জিতলে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টায়ার টু-‌র ম্যাচ খেলতে ইরানে খেলতে যেতে হতে পারে?‌ ঘটা করে নিজেরাই তো এসিএল ২র ড্রয়ে অংশ নিতে গিয়েছিলেন সুপার জায়ান্টের প্রতিনিধিরা। সেখানে ড্রতে ইরানের সেপাহান এফসির বিরুদ্ধে ম্যাচ পড়ার পর মোহনবাগান ক্লাব কর্তা বা সুপার জায়ান্ট টিম ম্যানেজমেন্টের মুখে একবারও কোনও আপত্তিসূচক মন্তব্য শোনা যায়নি। ঘরের মাঠে আহাল এফকের বিরুদ্ধে হারের আগে পর্যন্ত তাদের ইরান ম্যাচ খেলতে যাওয়ার সমস্যা নিয়ে কোনও বক্তব্য পেশ করা বা বিবৃতি দেওয়া হয়নি। এএফসির কাছে তখনই কোনও প্রতিবাদ বা নিরপেক্ষ মাঠে খেলার দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে, এমন কোনও কথা প্রচারমাধ্যমকে বলা হয়নি। যদি তর্কের খাতিরে ধরেই নি, তলায় তলায় এসব কাজ করছিলেন কর্তারা, সেটা প্রচারমাধ্যমকে জানালে কী ক্ষতি ছিল, এখন যেমন বিবৃতি দিয়ে নিজেদের কৃতকর্মের সাফাই দিতে হচ্ছে, ইনভেস্টারের ঢাল হয়ে দাঁড়াতে হচ্ছে যৌথ বিবৃতি দিয়ে।

কোচ, ফুটবলারদের নিরাপত্তার প্রশ্নে ইরানে খেলাতে না যাওয়ার পেছনে যুক্তি দেওয়া, ইনভেস্টার সঞ্জীব গোয়েঙ্কার বিপুল পরিমান টাকা ব্যয় করে দল গড়ার জন্য তাঁর পাশে দাঁড়ানোটা সভাপতি দেবাশিস দত্ত ও সচিব সৃঞ্জয় বসুর কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। কারণ সদস্য-‌সমর্থকরা যতই লাফান, তাঁরা তো আর ৭০-‌৮০ কোটি টাকা দিয়ে দল গড়েন না, দল গড়েন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। এমনকি, প্রাক্তন সভাপতি টুটু বসুর মতো নিজের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে দল গড়ার পিছনে কোনও ভূমিকা নেই বর্তমান কর্তাদের। বরং তাঁরা ভালই জানেন, কোনও কারণে সদস্য-‌সমর্থকদের ক্ষোভ প্রকাশে বিরক্ত হয়ে সঞ্জীব গোয়েঙ্কা সরে গেলে মুখ থুবড়ে পড়বে মোহনবাগান। নতুন ইনভেস্টার বা স্পনসর পেতে মাথা খুঁড়ে মরতে হবে। অতএব যৌথ বিবৃতি দিয়ে সঞ্জীব গোয়েঙ্কাকে শিবের মতো তুষ্ট রাখার পথ বেছে নিয়ে তাঁরা ঠিকই করেছেন।

কিন্তু সমস্যা হল অন্য জায়গায়। মোহনবাগান কর্তারা যৌথ বিবৃতি দিয়ে সঞ্জীব গোয়েঙ্কাকে না হয় সন্তুষ্ট করলেন, কিন্তু এএফসির শাস্তি এড়াবেন কীভাবে?‌ ইতিমধ্যেই গতবারের মতো এবারও এএফসি এসিএল ২ থেকে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে বাতিল করেছে। জানিয়ে দিয়েছে, আহাল এফকে ম্যাচে মোহনবাগানের ফল ও গোল ধরা হবে না। বাকি টুর্নামেন্টে মোহনবাগানের ম্যাচগুলির কোনও মূল্য নেই। সূচীতে থেকেই ম্যাচগুলি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গতবারের পর একইরকম কান্ড ঘটানোয় এএফসি কি এটুকু সিদ্ধান্ত নিয়েই ছেড়ে দেবে মোহনবাগান এসজিকে?‌ যদি দেয় ভাল, নইলে মোহনবাগানের কপালে দুঃখ আছে।

এএফসি তো আর মোহনবাগান সদস্য বা সমর্থক নয়, যে কর্তাদের যৌথ বিবৃতির যুক্তিতে নরম মনোভাব দেখাবে। মোহনবাগান বড়সড় শাস্তি এড়াতে আগেই কোর্ট অফ আর্বিট্রেশন(‌ক্যাসের)‌ দারস্থ হয়েছিল। কিন্তু তাদের ইরানে খেলতে না যাওয়ার পেছনে দেওয়া যুক্তি ও বিষয় বিবেচনা করতেই রাজি হয়নি, বাকি দুই ক্লাব আল ওয়াদা ও আল মহারাক ইরানে গিয়ে ম্যাচ খেলায়। একইসঙ্গে ভারতের এক ম্যাচ কমিশনার ইরানে পৌঁছে যাওয়ায়। এই দুটি দল বা সেই ম্যাচ কমিশনার জীবনের ঝুঁকি বা বীমার শর্তপূরণ না হওয়ার যুক্তিকে ঢাল করে ইরান যাওয়া থেকে বিরত থাকেননি।

এখন একটাই প্রশ্ন যৌথ বিবৃতি দিয়ে সঞ্জীব গোয়েঙ্কার পাশে দাঁড়ানো মোহনবাগান কর্তাদের কাছে, এএফসি যদি এসিএল ২ থেকে বাতিল করার পর মোহনবাগানকে শুধু জরিমানা করে অব্যহতি না দিয়ে এক বছরের বেশি এএফসির সব টুর্নামেন্ট খেলা থেকে নির্বাসন দেয়, তাহলে তারা খেলবে কোথায়?‌ তখন আর আইএসএল বা সুপার কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে লাভটা কী হবে?‌ আইএসএল শিল্ড বা সুপার কাপ জয়ীরাই তো এসিএল ২তে খেলার সুযোগ পায়। আইএসএল কাপ, শিল্ড বা ডুরান্ড খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ট্রফি কেবিনেটের শোভাবর্ধন হতে পারে, ডার্বি জিতে মানসিক তৃপ্তি লাভ, কিন্তু নির্বাসনমুক্তি না ঘটা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগ মিলবে না। তখন বিশ্বকাপ খেলা বিদেশিদের দল রেখে ঘরোয়া টুর্নামেন্ট খেলাটা জলসাঘরের জমিদার ছবি বিশ্বাসের মতো হাতি পোষার অনর্থক বোঝা হয়ে দাঁড়াবে না তো?‌ আর সঞ্জীব গোয়েঙ্কার সেই স্বপ্নপূরণই বা কীভাবে হবে?‌ তিনি যে গত দু’‌মরশুম ধরে বলে আসছেন, তাঁর লক্ষ্য শুধু ঘরোয়া ফুটবলে সেরা হওয়া নয়, মোহনবাগানকে আন্তজার্তিক স্তরেও বড়সড় সাফল্য পেতে দেখতে চান।

খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com

অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন:ফেসবুক ও টুইটার

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments