বাংলাদেশ ১(মোরসালিন) ভারত ০
মুনাল চট্টোপাধ্যায়: এর আগে ৩০ বার মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও বাংলাদেশ ফুটবল দল। তার মধ্যে ভারত জিতেছিল ১৪ বার, বাংলাদেশ মাত্র ৪ বার। বাকি ম্যাচ ড্র। সেই ছবিটা এখন পাল্টাতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার ঢাকার মাঠে এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারের নিয়মরক্ষার ম্যাচে ২৩ হাজার দর্শকের সামনে ভারতীয় ফুটবল দলকে ১-০ গোলে হারিয়ে পঞ্চমবার জয় তুলে নিল বাংলাদেশ। ২২ বছর আগে ঢাকার মাটিতে শেষবার হেরেছিল ভারত। এবার আবার হারের মুখ দেখল। ভারতীয় দলের খেলায় কোনও পরিকল্পনা না থাকাতেই এই হাল। সারা ম্যাচে গোল করার মতো একটাও পরিস্থিতি বা সুযোগ তৈরি করতে পারেনি খালিদ জামিলের ভারত। মোহনবাগান ফুটবলারদের না খেলানোর খেসারত গিতে হল খালিদের জেদ বজায় রাখতে গিয়ে।
ঘরোয়া ফুটবল থমকে থাকলে কী হয়, সেটা ভালই টের পাচ্ছে ভারতীয় ফুটবল। না খেলে খেলে ভারতীয় ফুটবলারদের দক্ষতায় জং ধরে গেছে। সেটা ভালভাবেই টের পাওয়া গেল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচে। ১১ মিনিটে ভারতের গোল হজম তো সেকারণেই। মাঝমাঠে মোরসালিন বল পেয়ে যখন বাঁদিকে রাকিপকে দেন, তখন ভারতীয় কোনও ডিফেন্ডারই নিজের জায়গায় ছিলেন না। সকলেই নিজেদের মাঝমাঠ ছাড়িয়ে ওপরে দাঁড়িয়ে। বল পেয়ে রাকিপ দ্রুত বাঁপ্রান্ত ধরে এগিয়ে ভারতের বক্সের কোনে পৌঁছে মাইনাস রাখলে, সেই বল তাড়া করে মোরসালিন আলতো টোকায় আগুয়ান গোলকিপার গুরপ্রীতের পাশ দিয়ে জালের ভেতর পাঠান। ১৯ বছরের মহম্মদ মোরসালিন এখন বাংলাদেশের নতুন সেনসেশন ফুটবলে। তবে অবাক লেগেছে, ভারতীয় ডিফেন্ডারদের অবস্থা দেখে। ওপরে উঠে যাওয়ার পর তাড়াতাড়ি নেমে প্রতিপক্ষের আক্রমণ রোখার মতো জায়গায় পৌঁছতে পারেননি বক্সের মাঝে মোরসালিন বল ধরার সময়।
গোল খাওয়ার আগে বা পরেও ভারতীয় দলের খেলায় গঠনমূলক কিছু চোখে পড়েনি। বাংলাদেশ ম্যাচের আগে ভারতীয় দলের চিফ কোচ খালিদ জামিল বলেছিলেন, এটাই নাকি নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার সময় নতুন করে। এই যদি তার ছিরি হয়, তাহলে বলতে হবে ইগর স্টিমাচের সময় ভারতীয় ফুটবল যতটা এগিয়েছিল, তার ১০গুন পিছিয়ে গেছে মানোলো মারকোয়েজ ও খালিদ জামিলের কোচিং কালে।
কাফা নেশনস কাপে ব্রোঞ্জ জিতে হাওয়ায় উড়ছিল খালিদ জামিলের ভারত। তাদের প্রথমে বাস্তবের মাটিতে নামিয়ে আনে সিঙ্গাপুর গোয়ার মাঠে হারিয়ে, পরে এবার তাদের আরও টেনে নামাল বাংলাদেশ। সুনীল ছেত্রীর অবসর ভেঙে ভারতীয় দলে প্রত্যাবর্তনে কোনও ফল মেলেনি। এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারের চারটি ম্যাচের একটিও জেতেনি ভারত। দুটি ড্র করেছিল, দুটিতে হার। তার মধ্যে প্রথম দফায় শিলংয়ের মাঠে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গোলশূণ্য ড্র ছিল। কোয়ালিফায়ারের প্রথম ২টি ম্যাচের সময় ভারতীয় দলের কোচ ছিলেন মানোলো মারকোয়েজ। সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে ঘরে ও বাইরে ২টি ম্যাচে কোচের ভূমিকায় খালিদ।
ঢাকার মাঠে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় দলের হারের কারণ অবশ্যই খালিদ জামিলের জেদ। প্রতিপক্ষ দলে হামজা চৌধুরির মতো ফুটবলার আছে জেনেও, খালিদের মোহনবাগান ফুটবলারদের বাদ দিয়ে খেলতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কখনওই সমর্থনযোগ্য নয়। বিশেষ করে সুনীলের মতো লিডার যখন টিমে নেই। মোহনবাগান বলেছিল, ফিফা উইন্ডোর আগে তারা নিজেদের ফুটবলার ছাড়বে না। এতে রেগে গিয়ে মোহনবাগান ফুটবলারদের বাদ দিয়ে খেলতে গিয়ে নিজে ডুবলেন, ভারতের নাম ডোবালেন বাংলাদেশ ম্যাচে। খালিদ হয়ত ভেবেছিলেন, অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্ট পরিত্যাগ করে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়া রায়ান উইলিয়ামসকে বাংলাদেশ ম্যাচে খেলিয়ে বাজিমাত করবেন। কিন্তু ম্যাচের আগেরদিন অস্ট্রেলিয়া থেকে নোঅবজেশনের মেল এলেও ফিফা থেকে ক্লিয়ারেন্স এসে পৌঁছয়নি। সেকারণে দলের সঙ্গে ঢাকা গেলেও রায়ান মাঠে নামতে পারেননি।
ভারত: গুরপ্রীত, রাহুল, আনোয়ার, সন্দেশ, আকাশ, সুরেশ(ফানাই), নিখিল(মহেশ), ম্যাকারটন(ব্রাইসন), বিক্রমপ্রতাপ, রহিম, ছাংতে(সানান)।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন:ফেসবুক ও টুইটার





