অলস্পোর্ট ডেস্ক: ড্র নয়, শনিবার মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে তাঁর দল যে তিন পয়েন্টের লক্ষ্যেই নামবে, তা স্পষ্ট জানিয়েই দিলেন ইস্টবেঙ্গলের কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত । লিগ তালিকায় চার নম্বরে থাকা মুম্বই সিটি এফসি-র ঘরের মাঠে নামার আগে সে রকমই জানিয়ে দিলেন লাল-হলুদ বাহিনীর কোচ।
চলতি লিগে অপরাজিত মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচ যে বেশ কঠিন হতে চলেছে, তা মেনে নিয়েও ইস্টবেঙ্গলের কোচ বলছেন, তিন পয়েন্ট ছাড়া কিছু ভাবছে না তাঁর দল। গত দুই ম্যাচ থেকে যে আত্মবিশ্বাস পেয়েছেন তিনি ও তাঁর দলের ফুটবলাররা, সেই আত্মবিশ্বাস থেকেই এই কথা বলছেন কুয়াদ্রাত।
লিগের অন্যতম কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার আগে স্প্যানিশ কোচ বলেন, “প্রতি ম্যাচেই আমরা জিততে চাই। প্রতি ম্যাচেই তিন পয়েন্ট পাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছি আমরা। আইএসএলে প্লে অফে উঠতে গেলে অন্তত কয়েকটা ম্যাচ জিততে হয়ই। গত মরশুমে যে সংখ্যক জয় নিয়ে দলগুলো প্লে অফে উঠেছিল, এ মরশুমে অতগুলো জয় দরকার নাও হতে পারে। কারণ, এ বার অনেকগুলো ম্যাচ ড্র হচ্ছে। এই ম্যাচেও আমরা তিন পয়েন্টের জন্যই নামব। কারণ, এ পর্যন্ত আটটার মধ্যে দুটো ম্যাচ জিতেছি আমরা। তাই আমাদের অবশ্যই আরও জয় চাই”।
মুম্বই যে প্রতিপক্ষ হিসেবে বেশ কঠিন, তা স্বীকার করে নিয়ে আইএসএল জয়ী কোচ বলেন, “ওরা যে খুব ভাল দল, গতবারের লিগ চ্যাম্পিয়ন, তা আমরা জানি। অনেক রেকর্ড ভেঙেছে ওরা। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও খেলেছে। ভাল ফল না করতে পারলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রতি ম্যাচ থেকে ওদের খেলোয়াড়রা অনেক কিছু শিখেছে। দল হিসেবে অনেক উন্নতি করেছে ওরা। আমাদের পক্ষে ম্যাচটা বেশ কঠিন হতে চলেছে। আমার মতে, এই লিগের সেরা ফুটবলার গ্রেগ স্টুয়ার্ট। তাই এই ম্যাচে ওর প্রভাব যাতে বেশি না পড়ে, সে ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে”।
কেন এতটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথাগুলো বলছেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন লাল-হলুদ কোচ। বলেন, “আমার দলের খেলোয়াড়রা ঠিক পথেই এগোচ্ছে। যেমন পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেই অনুযায়ীই ওরা খেলছে। এটা ইতিবাচক ব্যাপার। টানা দুটো ম্যাচে গোল না খাওয়াটাও বড় ব্যাপার। যা আইএসএলের গত তিন মরশুমে তো হয়ইনি, এমনকী ২০১৯-এর পর থেকে আই লিগেও হয়নি। এর মানেই আমরা উন্নতি করছি। আমাদের পারফরম্যান্সে ক্রমশ ধারাবাহিকতা ফিরে আসছে। এ জন্য সময় লাগে। প্রতি ম্যাচেই আমরা কিছু না কিছু শিখছি”।
তবে সুযোগ কাজে লাগানোর ব্যাপারে যে আরও তৎপর ও নিখুঁত হতে হবে তাঁর দলের অ্যাটাকারদের, এই কথাও স্বীকার করেন কুয়াদ্রাত। বলেন, “দলের খেলোয়াড়দের যে খেলা দেখছি এবং ম্যাচের বিভিন্ন মুহূর্তে যে ভাবে তারা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তা ইতিবাচক। কিন্তু আমাদের সুযোগগুলোকে আরও নিখুঁত ভাবে কাজে লাগাতে হবে। আমরা যে জয়ের জন্য অনেক গোলের সুযোগ তৈরি করছি, এটা খুবই ইতিবাচক ব্যাপার। গত ম্যাচেও দল জয়ের জন্য মরিয়া ছিল। ম্যাচের শেষ দিকে বিষ্ণু ও ক্লেটন যে সুযোগ পেয়েছিল, সেগুলো কাজে লাগাতে পারলে আমরা সে দিন টানা দ্বিতীয় জয় সেলিব্রেট করতে পারতাম”।
নর্থইস্ট ইউনাইটেডকে আইএসএলে তাদের সবচেয়ে বড় ব্যবধান ৫-০-য় হারানোর পর গত ম্যাচে পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে ইস্টবেঙ্গল এফসি। সেই ম্যাচের প্রসঙ্গ টেনে এনে কোচ বলেন, “পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে আমরা তিন পয়েন্টের জন্যই নেমেছিলাম এবং ভাল, পেশাদার ফুটবল খেলি। কিন্তু প্রতি ম্যাচই ভিন্ন প্রকৃতির হয়। নর্থইস্টের বিরুদ্ধে ২৫ মিনিটের মধ্যে দু’গোল দিয়ে দিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, গত ম্যাচে আমরা একাধিক ভাল সুযোগ পেয়েছিলাম, কিন্তু সেগুলো থেকে গোল করতে পারিনি। আমরা যদি সুযোগ পেয়েও গোল করতে না পারি, তা হলে আমাদের প্রতিপক্ষের আত্মবিশ্বাস বেড়েই যাবে। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে যায়”।
দলের সিনিয়র ডিফেন্ডার ও অধিনায়ক হরমনজ্যোৎ সিং খাবরার চোট নিয়ে সমর্থকদের দুঃসংবাদ দিয়ে তাদের কোচ বলেন, “আমরা অবশেষে জানতে পেরেছি যে খাবরার ল্যাটরাল লিগামেন্টে চোট লেগেছে। যতটা খারাপ হতে পারত, ততটা অবশ্য নয়। ওকে সুস্থ করে তুলতে কয়েক সপ্তাহ লাগবে। তবে আশা করি, পুরো মরশুমের জন্য ও ছিটকে যাবে না”।
প্রশ্ন উঠছে স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড হাভিয়ে সিভেরিওর গোলখরা নিয়েও, যার উত্তরে কুয়াদ্রাত বলেন, “ডুরান্ড কাপে ও-ই আমাদের প্রধান সেন্টার ফরোয়ার্ড ছিল। ওই টুর্নামেন্টে দু’গোল করে আমাদের দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ফাইনালে উঠতে সাহায্য করে। লিগে ওর ফিনিশিংয়ে সমস্যা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু কিছু ভাল গোলের সুযোগ ও তৈরি করেছে। দলকে ও সাহায্য করছে ঠিকই। কিন্তু ওর দুর্ভাগ্য যে ওর ফাইনাল টাচে সমস্যা হচ্ছে। গোল পাওয়ার জন্য অনেক পরিশ্রম করছে। এ দেশে সবাই জানে ওর প্রচুর গোল করার ক্ষমতা আছে। এখন ওর সাহায্যের প্রয়োজন। অবশ্যই ও গোল পেতে শুরু করবে”।
জানুয়ারির দলবদলে তাদের ভূমিকা নিয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ কার্লস কুয়াদ্রাত। তবে কেন তিনি এই ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলতে চান না, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তবে তাঁর কথায় স্পষ্ট ইঙ্গিত যে, জানুয়ারিতে কয়েকটি নতুন মুখ হয়তো দেখা যাবে এই শিবিরে। বলেন, “এই নিয়ে এখনই বলার মতো কিছু নেই। আমাদের এই নিয়ে বসতে হবে। আমাদের ক্লাবে এই নিয়ে পেশাদার নিয়েমেই অনেক কাজ হয় এবং ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে আমরা সবাই কাজ করি। আমি নিজে জর্ডনে গিয়ে হিজাজিকে নিয়ে এসেছিলাম এলসির পরিবর্তে খেলানোর জন্য। আমরা অনেক ভিডিও দেখি। খেলোয়াড়দের চিহ্নিত করি, খেলোয়াড়দের ফোন করি। কাজের সুবিধার জন্য কিছু কিছু ব্যাপার গোপন রাখতেই হয়। ক্লাবের ভালর জন্য আমরা সবসময়ই কাজ করে চলেছি এবং অনেক কিছুই পর্দার আড়ালে হয়, যা জানানো সম্ভব হয় না”।
এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “আমাদের সামনে এখনও দুটো দলবদলের উইন্ডো রয়েছে। বড়দিনের সময় ও পরের গ্রীষ্মে। প্রতি উইন্ডোতেই আমাদের সামনে ভাল খেলোয়াড় এনে দলের উন্নতি করার সুযোগ থাকে। কিন্তু এর পিছনেও অনেক ব্যাপার আছে। বাজেট, খেলোয়াড়দের চাহিদা, যাদের চাইছি, তাদের আর কোনও ক্লাব থেকে কী রকম প্রস্তাব রয়েছে। এইসব নিয়েই আমরা কাজ করে চলেছি, যাতে ক্লাবের আরও উন্নতি করা যায়”।
(লেখা আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার