সুচরিতা সেন চৌধুরী: হাত থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে ম্যাচকে কীভাবে নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নিতে হয় সেটা এই মরসুমে একাধিকবার প্রমাণ করেছে মোহনবাগান। এমনকি দ্বিতীয় সেমিফাইনালেও ঘরের মাঠে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে আপুইয়ার অতিরিক্ত সময়ের গোলই ফাইনালে পৌঁছে দিয়েছিল মোহনবাগানকে। ফাইনালে প্রথমে পিছিয়ে পড়ে সমতায় ফিরে ম্যাচকে অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে গিয়ে শুরুতেই ব্যবধান বাড়িয়েছিল মোলিনার দল। আর শেষ পর্যন্ত সেটা ধরে রেখে ডবল ট্রফি নিয়েই আইএসএল মরসুম শেষ করল মোহনবাগান। মুম্বই সিটি এফসির পর কোনও দল একই মরসুমে শিল্ড ও কাপ জিতে নিল।
ঘরের মাঠে আইএসএল ২০২৪-২৫ ফাইনাল ম্যাচে বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে খেলবে মোহনবাগান, এটা নিশ্চিত হতেই শহর জুড়ে সাজ সাজ রব শুরু হয়ে গিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই সঙ্গে ছিল টিকিটের হাহাকার। আর তার মধ্যেই মোহনবাগান সমর্থকরা গ্যালারি ভরিয়েছিলেন। স্বপ্ন একটাই, এবার শিল্ডের পাশাপাশি চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফিটাও দলের হাতে দেখা। গত মরসুমে এই ঘরের মাঠেই মুম্বইয়ের কাছে হেরে সেই স্বপ্ন মাঠেই ফেলে যেতে হয়েছিল মোহনবাগানকে। এবার অন্য কাহিনী লিখতে চেয়েছিলেন মোলিনা। ৫৯ হাজার ১১২-এর গ্যালারিকে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন টম আলড্রেড। কিন্তু তাঁদের আবার উচ্ছ্বাসে ফেরান জেসন কামিন্স। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। আর সেখানেই বড় চমক দেন কোচ মোলিনা। অধিনায়ক শুভাশিস বোসকে তুলে নামিয়ে দেন দীপক টাংরিকে। তার আগে অবশ্য আশিক কুরনিয়ানকে নামিয়ে খেলায় গতি ফিরিয়ে আনেন তিনি।
প্রথমার্ধে খেলাটা শুরু করেছিল মোহনবাগানই। তবে তা খুবই ক্ষণস্থায়ী। বরং ১০ মিনিট পর থেকেই সেই খেলার রাশ নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় বেঙ্গালুরু এফসি। তবে দু’দলের কেউই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। শুরুটা করছিল মোহনবাগানই। ম্যাচ শুরুর আট মিনিটের মধ্যেই সুযোগ চলে এসেছিল মোহনবাগানের সামনে। জেমি ম্যাকলারেনের শট বাঁচিয়ে দিয়েছিলন গুরপ্রীত। সেই সময় বক্সের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছিলেন জেসন কামিংস তবে তিনি বলের নাগাল পেলেও সঠিক টাচ করতে ব্যর্থ হন। সেই শুরু সেই শেষ। আর তেমনভাবে সুযোগ তৈরি করতে পারেনি মোহনবাগান। বরং অনেক বেশি খেলায় জাঁকিয়ে বসে বেঙ্গালুরু এফসি। পর পর সুযোগ কোনওরকমে বাঁচান কখনও শুভাশিস গোল লাইন থেকে কখনও বিশাল কাইথ। যার ফল প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্যভাবেই।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধটা যেন অন্য মুডেই শুরু করে বেঙ্গালুরু এফসি। দ্বিতীয়ার্ধের সবে চার মিনিটই হয়েছিল, এগিয়ে যায় বেঙ্গালুরু তবে এক মোহনবাগানীর গোলে। রায়ান ডেল উইলিয়ামসের বক্সের মধ্যে উড়ে আসা ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজের গোলেই ঢুকিয়ে দেন অ্যালবার্তো রডরিগেজ। বিশাল কাইথের চোখের পলক ফেলার আগেই গোলে চলে যায় বল। এগিয়ে যায় বেঙ্গালুরু। এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সামান্য ভুলও যে কঠিন হয়ে যেতে পারে সেটা সবারই জানা। তবে মোহনবাগানকে খেলায় ফেরায় পেনাল্টি।
৭০ মিনিটে কামিংসের ক্রস বক্সের মধ্যে পেয়ে গোলে শট নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন জেমি ম্যাকলারেন। কিন্তু তাঁর শট গিয়ে লাগে বেঙ্গালুরুর চিংলেনসেনা সিংয়ের হাতে। পেনাল্টি পায় মোহনবাগান। আর সেই পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি জেসন কামিংস। ৪৯ মিনিটে পিছিয়ে পড়ে ৭২ মিনিটে সমতায় ফেরে মোহনবাগান। আর তার পরই খেলার রাশ নিজেদের হাতে তুলে নেয় টেবল টপাররা। যার ফল ১-১ গোলে ৯০ মিনিট শেষ করা মোহনবাগান অতিরিক্ত সময়ের শুরুতেই ২-১ করে ফেলে জেমি ম্যাকলারেনের গোলে। স্টুয়ার্টের ক্রস থেকে ম্যাকলারেনের নিখুঁত ফিনিশেই লেখা হয়ে যায় লিগশিল্ড ও ট্রফি জয়ের কাহিনী।
মোহনবাগান: বিশাল কাইথ, শুভাশিস বোস (দীপক টাংরি), টম আলড্রেড, আলবার্তো রডরিগেজ, আশিস রাই, অনিরুদ্ধ থাপা (সাহাল আব্দুল সামাদ), মনবীর সিং, আপুইয়া, লিস্টন কোলাসো (আশিক কুরুনিয়ান), জেমি ম্যাকলারেন (দিমিত্রি পেত্রাতোস), জেসন কামিন্স (গ্রেগ স্টুয়ার্ট)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার