সুচরিতা সেন চৌধুরী: মুখোমুখি শুভাশিস বোস আর গুরপ্রীত সিং সান্ধু। একজন মোহনবাগানের রক্ষণের ভরসা আর একজন বেঙ্গালুরুর শেষরক্ষণকে সামলে চলেছেন দীর্ঘদিন। দু’জনেই দীর্ঘদিন জাতীয় দলের হয়ে এক সঙ্গে সামলে চলেছেন দেশের রক্ষণ। যদিও শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে দলে ছিলেন না গুরপ্রীত। তবে ভারতীয় জাতীয় দল দেখলে দেখা যাবে, মোহনবাগান ও বেঙ্গালুরু এফসির ফুটবলাররাই জাতীয় দলের মূল কান্ডারি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে দেশের জার্সিতে যাঁরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করেন, শনিবার তাঁরাই সম্মুখ সমরে। আইএসএল ২০২৪-২৫-এর ফাইনালের ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে সেমিফাইনাল শেষ হতেই। বেঙ্গালুরু এফসির ফাইনালে পৌঁছনো সহজ হলেও মোহনবাগানের জন্য সহজ ছিল না। প্রথম সেমিফাইনাল হেরে গিয়েছিল মোহনবাগান। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে শেষ মুহূর্তের গোলে জয় তুলে নিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে ঘরের মাঠে বেঙ্গালুরুর মুখোমুখি কলকাতার দল। কোচেদের মতো তাই দুই দলের দুই প্লেয়ারও মনে করছেন পার্থক্য গড়ে দিতে পারে ৮৫ হাজারের গ্যালারিই।
সে কথা মেনেও নিলেন মোহনবাগান অধিনায়ক শুভাশিস বোস। বলেন, ‘‘ঘরের সমর্থকদের সামনে খেলা সব সময়ই অসাধারণ অনুভূতি। আশা করছি সব মেরিনার্সরা আমাদের সমর্থন করতে মাঠে আসবে।’’ তবে সামনে যখন মোহনবাগান অধিনায়ক তখন ঘুরে ফিরে যে গত মরসুমে ফাইনাল হারের হতাশার কথা উঠে আসবে তা তো স্বাভাবিকই। মোহনবাগানের তিনটি আইএসএল ফাইনালেই খেলা শুভাশিসের অবশ্য স্পষ্ট জবাব, ‘‘আমরা গতবারের ফলাফল বদলাতে পারব না এখন আর তাই আমরা সেটা ভুলে এই ম্যাচের দিকেই ফোকাস করতে চাই। এই বছর প্রতিপক্ষ বদলে গিয়েছে। গত বছর মুম্বই ছিল, এবার বেঙ্গালুরু। আমরা সেটা নিয়েই ভাবছি। তবে হ্যাঁ, আমরা গতবারের ভুল থেকে অনেক শিক্ষা নিয়েছি। চেষ্টা করব সেই ভুলগুলো যেন এবার না হয়।’’
তবে পুরো দল যে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে রয়েছে সেটাও বুঝিয়ে দিলেন অধিনায়ক। আর হবে নাই বা কেন, টানা অসাধারণ পারফর্ম করছে একটা দল। এক মরসুমে একাধিক রেকর্ড করে ফেলেছে। আইএসএল-এর ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে পেরিয়ে গিয়েছে ৫০ পয়েন্টের গন্ডি। সব মিলে, চ্যাম্পিয়ন না হওয়াটাই এখন অঘটন। তবে প্রতিপক্ষ যে সহজে ছেড়ে দেবে না সেটাও খুব ভাল করে জানেন শুভাশিস। পাশে বসেই শুনেছেন, দলের কোচ বার বারই প্রশংসায় ভরিয়েছেন বেঙ্গালুরুকে। এই মরসুমে দু’বার খেলে এটাও টের পেয়েছে ঠিক কতটা শক্তিশালী সুনীল, গুরপ্রীতদের বেঙ্গালুরু।
শুভাশিস বলছিলেন, ‘‘যখন আমরা ফাইনাল খেলতে নামছি তখন আত্মবিশ্বাসী হয়েই নামছি। আমি তিনটি ফাইনাল খেলেছি, তা থেকে এটা বুঝি সেই দিন যে ভাল খেলবে সেই জিতবে।’’ আসলে ফুটবলে এক একটা মুহূর্তই বদলে দিতে পারে খেলার রঙ। বদলে দিতে পারে প্রত্যাশিত ফলাফল। তাই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসকে জায়গা দিতে নারাজ কেউই। এই মুহূর্তে তাই শুধুই পাখির চোখ আইএসএল ২০২৪-২৫ ফাইনাল। যে কারণে এএফসি নিয়ে প্রশ্নকে পাস কাটিয়েই গেলেন শুভাশিস। বলে দিলেন, ‘‘এএফসির জন্য এখনও সময় আছে, এখন আমাদের একটাই লক্ষ্য, আইএসএল ফাইনালে জয়।’’
পাশে তখন বেশ ফুরফুরে মেজাজেই বেঙ্গালুরু গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধু। কোথাও কোনও জড়তার প্রকাশ নেই। তবে মেনে নিলেন যুবভারতীতে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলাটা যে সহজ নয় সেটা জেনেই তাঁরা প্রস্তুতি নিয়েছেন। বলছেন, ‘‘মোহনবাগানের জন্য এই ম্যাচে সমর্থকরাই একটা বড় ভূমিকা নেবে। আমরা সমর্থকদের জন্যই খেলি। আর এটাই সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। আর আমি চ্যালেঞ্জ ভালবাসি।’’
তবে যুবভারতীর প্রতি যে তাঁরও একটা ভালবাসা রয়েছে সেটাও মনে করিয়ে দিতে ভুললেন না। শুধু যুবভারতী নয়, বরং কলকাতাতেই খেলাটা তাঁর কাছে আলাদা ভাললাগা। বলছিলেন, ‘‘আমি সব সময় কলকাতায় খেলতে পছন্দ করি। আমি দীর্ঘদিন ধরে এখানে খেলছি। আবার এবার আইএসএল ফাইনাল খেলার সুযোগ এসেছে। আমরা এখানে সেরা দলের বিরুদ্ধে খেলতে চলেছি।’’
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার